সংখ্যালঘু নির্যাতন আর আওয়ামীলীগের ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে ক্ষমতায় বহাল

সম্প্রতি এক ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আবেদন আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সম্ভাব্য সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব।…আমাদের ইসলাম শান্তির ধর্ম। এটাই প্রতিটি ধর্মের মূল বাণী। এখানে সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম পালন করতে পারে। এটাই ইসলাম বলে, এটাই আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন এবং আমরা তা অনুসরণ করি।’ এই কথাগুলো ক্রমেই প্রচলিত হয়েছে। এসব কথা শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। কিন্তু এসব সুন্দর কথার পেছনে আসলে কী আছে? এই কারণেই আমাদের অঞ্চলে বা উপমহাদেশে এই শব্দগুলো প্রায়ই ধর্মনিরপেক্ষতা বলে প্রচার করা হয়! যদি কোনো মাওলানা সাহেব এ ধরনের কথা বলেন, তাহলে আমাদের উপমহাদেশে বলা হবে, তিনি ছিলেন অত্যন্ত ‘অসাম্প্রদায়িক’ ব্যক্তি, মহান ব্যক্তি। এইভাবে, অনেক গোঁড়া সাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ, কবি, নারীবাদী, লেখক, পণ্ডিতদের এখানে ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশকে আসলে নাস্তিক বলা হয়, যার অর্থ রাষ্ট্রের কোনো ধর্মীয় অবস্থানকে স্বীকৃতি দেয় না। আমরা জানি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও তার সাম্প্রদায়িক অবস্থান থেকে সহনশীলতার কথা বলেছেন বা এসব কথা আগেও বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে হবে’। এখন প্রশ্ন হল কে এই “আমরা” আর কে “সংখ্যালঘু”?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন কথা বলেন, তখন মনে করা হয় যে রাষ্ট্র বলছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে কোনো ধর্মীয় বা জাতিগত সাম্প্রদায়িক অবস্থান থাকে না। যাইহোক, ‘আমাদের দায়িত্ব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান করা’ – এটি চরম সহনশীলতা এবং উদারতার উদাহরণ, তবে বক্তৃতায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে এই রাষ্ট্রটি আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠদের দায়িত্ব, যার দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা। সংখ্যালঘুরা…

এই মুহুর্তে, আপনি ভাবতে পারেন, বাহ, এটি বেশ ভাল। খারাপ কি? আসলে বাংলাদেশে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা অনুচিত। আমিও এর সাথে একমত। আমিও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে এমন উদারপন্থী রাজনীতিবিদদের এই ধরনের আহ্বানের প্রতি সহনশীল। কিন্তু যখন একজন বিমল শীল রাষ্ট্রের কাছ থেকে সামান্য সহানুভূতিও পায় না, তার পরিবারের ১১ জন সদস্যকে ১৪ বছর ধরে পুড়িয়ে হত্যার বিচারই হোক, তখন উপরের সহনশীলতাকে আজেবাজে কথা ছাড়া আর কী বলব? বিএনপি আমলে বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের জন্য বিমল শীলের বাড়ির সদস্যদের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে হত্যা করে। ধানের শীষের সময় বিমল শীলও প্রার্থী তালিকায় আমিনুলের নাম উঠাতে পারেননি। পরে নৌকার আমলে বিমল শীল বোধহয় আশা করেছিলেন এবার বিচার হবে! বাংলাদেশের হিন্দুদের আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি বড় কুসংস্কার রয়েছে যে আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল, একটি সংখ্যালঘু-বান্ধব দল। কিন্তু সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাজ করা সকল গবেষকদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি হিন্দু সম্পত্তি হারিয়েছে। ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন ও সম্পদ লুণ্ঠনে সর্বদলীয় ঐক্য পরিলক্ষিত হয়। গোপালগঞ্জে পূর্ণিমার পরিবারের ওপর যে বর্বর নিপীড়ন হয়েছে, বাঁশখালীতে বিমল শীলের পরিবারের ওপর যে বর্বরতা হয়েছে সবই বিএনপি আমলে হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় যে, লীগ আমলে অদৃশ্য হাতের ইশারায় সেসব ঘটনার বিচার থমকে গেছে।

রামু, মালোপাড়া, নাসিরনগর, ঠাকুরপাড়ার মতো কিছু বড় হামলা ছাড়া অধিকাংশ হিন্দু নিপীড়ন নীরবেই ঘটে। গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হল হিন্দু পরিবারের মেয়েদের অপহরণ করে মুসলিমদের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। এ ধরনের অপহরণের ঘটনায় কোনো পরিবারকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। হিন্দুদের এই ভয় এতটাই বেড়েছে যে, ভারতে আত্মীয়-স্বজন থাকলে তারা সেখানে উপযুক্ত মেয়েকে পরিবারে পাঠানোর প্রবণতা রাখে। হিন্দু পরিবারের পুকুর-বাগান দখলের জন্য সর্বদলীয় ঐক্য গঠন করা হয়। টিটু রায়ের কিশোরী কন্যাকে অপহরণ করে গ্রামের একজন প্রভাবশালী মুসলিম যুবকের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। রংপুরে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার মূলেও রয়েছে হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের নীলনকশা। এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে কারণ বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার আজ পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। সবাই জানে হিন্দুরা নির্যাতিত হলে কেউ কিছু বলবে না। রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করে মিয়ানমার ঘৃণ্য হয়ে উঠলেও বাংলাদেশ হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করে একফোঁটা চোখের জল ফেলেনি। কারণ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথির কৌশল গ্রহণ করেছে। নাসিরনগর-রংপুরের মতো ছোট ছোট সার্জারির কথা আর কীই বা বলার আছে!

আসলে ইসলামের প্রকৃত দর্শন হল খুন, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের প্রায়ই শেখানো হয় যে কোন ধর্মই খুন, খুন বা ধর্ষণের কথা বলে নি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, আমরা যখন পুরো কুরআন পড়ি, তখন আমরা যা দেখি তা হলো: একে হত্যা কর, হত্যা কর, একে বন্দী কর, একে বন্দী কর ইত্যাদি। সমগ্র কুরআন আসলে একটি যুদ্ধের ক্ষেত্র, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র। হত্যা তাই এমন ধর্মের অনুসারীর জন্য পোড়া, ধ্বংস, ক্ষতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর প্রধানমন্ত্রী যাই বলে সেগুলো হল সব আই ওয়াশ।

11 Responses

  1. আমি আপনার সাথে একমত হতে পারছি না। আওয়ামীলীগ তো হিন্দুদের যথেষ্ট সুরক্ষা দিচ্ছে।

  2. আমাদের নেত্রীকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলিস না।

  3. খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছেন। খুব ভালো লেখনী।

  4. আওয়ামীলীগ ছাড়া আমাদের কোন গতি নাই।

  5. ফালতু কথা বলবেন না প্লিজ।

  6. ফালতু মানুষ আপনি, এটা কোন কথা হলো?

  7. আজাইরা কথা লিখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগায় এই ব্লগাররা, আমাদের সবার খুব সাবধানে থাকতে হবে।

  8. আপু আপনার কলমে কিন্তু জাদু আছে একদম। সবসময় এরকম অকপটে সত্য কথা লিখবেন আশা করি। শুভকামনা রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *