.
দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ চলছে। পত্র-পত্রিকায় এসব অভিযোগ উঠে আসছে। ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা নিঃসন্দেহে বহুগুণ বেশি। আমাদের মাদ্রাসার ছেলে-মেয়েরা তাদের ধর্মীয় শিক্ষকদের নির্মম নির্যাতনে মারা যাচ্ছে। কেউ কেউ নির্যাতনে মারা যাচ্ছে। আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে। তাদের অভিভাবকরাও ধর্মীয় শিক্ষকের ফতোয়া থেকে পালিয়ে যাওয়ার বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। প্রদীপের নিচে এই অন্ধকার নিয়ে কি আমাদের সমাজে এত প্রতিবাদ হয়েছে?
.
মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে আমাদের দেশে সামাজিক নীরবতা রয়েছে। এর একটি কারণ হল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের একটা শ্রদ্ধা ও ভীতি আছে। তাই এসব জায়গায় এত অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরও আমরা নীরব থাকি। সরকার উদাসীন। মিডিয়া উদাসীন থাকে। আলেমরা ফতোয়া দেন না। প্রচারকদের বিকট চিৎকারে আকাশ-বাতাস কাঁপে না। আমাদের সভ্য মানুষ চুপ থাকে; সরকারবিরোধী আন্দোলনে কেউ যোগ দেয় না। মাদ্রাসার ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য কেউ অনশন করে না।
.
অন্যদিকে, সমকামিতাকে সমর্থন করার জন্য ইসলামিক উগ্রপন্থীরা সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তনয়কে জবাই করেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন মাদ্রাসা শিক্ষককে সমকামিতার জন্য তাদের হাতে প্রাণ হারানোর কথা শোনা যায়নি। যেন মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ মোটেও ইসলাম বিরোধী নয় এবং এটা মেনে নিয়ে আমাদের দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য।
.
কিন্তু এই কোমলমতি শিশুরা কি মাদ্রাসায়, অর্থাৎ তাদের ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষিত হচ্ছে, আমাদের সন্তান নয়? তাদের নিরাপত্তা দেওয়া কি রাষ্ট্রের কাজ নয়? আর কতদিন আমাদের সমাজপতিরা মরা পাখির মতো ঘুমাবেন? কবে আমাদের সমাজ এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে?
.
মাদ্রাসা শিক্ষকরা কি ইসলামী শিক্ষার আড়ালে এসব ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড বিনা দ্বিধায় চালিয়ে যাবেন? সেই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, এই সব শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়ার মতো যথেষ্ট আইন কি আমাদের আছে?
.
নির্যাতিত মাদ্রাসা ছাত্র স্বেচ্ছায় এ অপরাধ করছে না। তাকে পাইকাম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাহলে আমি মনে করি যে মাদ্রাসা শিক্ষক জোরপূর্বক পাইকাম করাচ্ছেন তার সর্বোচ্চ শাস্তি শুধু যাবজ্জীবন নয়, আরও বেশি হওয়া উচিত।
.
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, 2000-এর ধারা 9(1) বলে যে যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা ‘শিশু‘কে ধর্ষণ করে, তাহলে সে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং জরিমানােও দণ্ডনীয় হবে।
.
এই আইনে ‘শিশুদের‘ কোনো লিঙ্গ বিভাজন নেই। আইনের ধারা 2(কে) ‘শিশু‘কে সংজ্ঞায়িত করে একজন ব্যক্তি যার বয়স 16 বছরের বেশি নয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে মাদ্রাসায় ধর্ষিত একটি ছেলেকে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, 2000 এর ধারা 9(1) অনুযায়ী ধর্ষণ বলে প্রমাণ করা সম্ভব।
.
যাইহোক, এবার আমি প্রশ্নটি একটু ভিন্ন জায়গায় রাখতে চাই। মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব, কিন্তু মাদ্রাসায় ধর্ষণের বিষয়টি আমরা ঠেকাতে পারছি না কেন? আমাদের বাধা কোথায়? অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরই কেন আমরা কাজ করি? এর আগে কি আমাদের কিছু করার নেই? মাদ্রাসাগুলো কি মনিটর করার কেউ নেই? নাকি আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের মাদ্রাসায় ভর্তি করি শুধু ধর্ষণের জন্য? আর আমরা না জানার ভান করে নীরবে ধর্ষিত হচ্ছি?
মাদ্রাসায় আমাদের শিশুরা কতটা নিরাপদ? কেন তারা দিনের পর দিন ধর্ষিত হচ্ছে?
.
মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকি করতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর? মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কেন আমাদের দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম তদারকি করতে পারছে না? মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকি করার এখতিয়ার যদি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের থাকে, তাহলে আমাদের মাদ্রাসার শিশুরা কেন মাদ্রাসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হবে?
.
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের জনগণের সাথে বরাদ্দকৃত বিশাল বাজেটের সুযোগ নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা আমাদের সন্তানদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না তা আমরা বরদাস্ত করব না। ট্যাক্সের টাকা। আমি মনে করি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের জবাবদিহিতা জনগণের সামনে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করা উচিত।
12 Responses
তো আপনি কি চান? রাষ্ট্র প্রত্যেক মাদ্রাসায় পাহারা দিবে?
মাদ্রাসা একটি পবিত্র স্থান যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু বিকৃত মানসিকতার লোকের জন্য মাদ্রাসা কলুষিত হচ্ছে।
ফালতু কথা বলবেন না।
একদম ঠিক বলেছেন ।
আপনার লেখা অনেক সুন্দর।
মাদ্রাসা নিয়ে বাজে কথা বলবেন না।
এগুলো সব বিএনপির মিথ্যাচার, মাদ্রাসায় এসব কক্ষনো হয়না।
অনেক দিন পর ভালো একটা লেখা পড়লাম।
বাজে কথা বলবেন না।
ফালতু একটা মহিলা।
যৌক্তিক কথা বলেছেন।
মিত্যাছার এগুলা।