আজকের বর্বর সমাজের সিঙ্গেল মাদার

.

সৃষ্টির শুরু থেকেই নারী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমে পরিবারগুলো গড়ে উঠেছে। কিন্তু একসঙ্গে বসবাস ও চলাফেরা করতে গিয়ে ভিন্নতাসহ নানা কারণে অনেক পরিবার ভেঙে যায়। এক পর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে ওঠে। এরপর সমাজে বসবাসকারী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার! কারণ একক মা এবং অবিবাহিত নারীরা সমাজে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়, সমাজ মানুষ হিসেবে তাদের ইচ্ছাকে সম্মান করতে চায় না। ফলে সেসব নারীর সামাজিক সমস্যা বেড়ে যায়। যৌন হয়রানিসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে তাদের জীবন চলে। অনেক সময় বিয়ের জন্যও নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে ওই নারীদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। বিয়েতে রাজি না হলে নারীকে সামাজিকভাবে হয়রানি করা হয় এবং তার সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করা হয়। এত কিছুর পরও যখন একজন নারী মানসিক দৃঢ়তার সাথে টিকে থাকার চেষ্টা করেন, তখন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তাকে তার ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখা বা চরিত্রগত ত্রুটির কারণে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে!

.

দাম্পত্য জীবন থেকে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর- পুরুষরা সমাজে যতটা স্বাধীনভাবে, স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে বসবাস করতে পারে, নারীরা পারে না। অবিবাহিত মহিলাদের সমাজে টিকে থাকা একটি আসল যুদ্ধ। কারণ অনেকেই মনে করেন একক মা মানেই অসহায়! আবার কেউ কেউ মনে করেন একাকী মা একাকীত্বে ভুগছেন। তাই অনেকে অকারণে তাকে সহানুভূতি দেখাতে চায়। এতে তার মানসিক শান্তি আরও বিঘ্নিত হয়। যাইহোক, যেখানে শিশুরা একজন মায়ের প্রধান পছন্দ, সংগ্রাম তার সর্বদা সঙ্গী। তাই সব ধরনের বাধা-বিপত্তিকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় সংগ্রামী মায়েদের।

.

আমাদের সমাজে এখনও অনেকেই সিঙ্গেল মাদারের বিষয়টি খুব সহজে মেনে নিতে পারেন না। তারা মনে করেন, নারীরা পুরুষের সাহায্য ছাড়া সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব পালনে অপারগ। যে কারণে অবিবাহিত মায়েরা প্রতিনিয়ত হাজারো প্রশ্নে জর্জরিত থাকেন। একক মায়েদের সন্তানদেরও সমাজে বিভিন্ন অপ্রিয় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, যার ফলস্বরূপ তারাও একা থাকতে পছন্দ করে। অন্যান্য শিশুদের মতো সাধারণত সমাজের সাথে মিশে যেতে না পেরে তারা ধীরে ধীরে অসামাজিক হয়ে ওঠে।

.

সিঙ্গেল মাদার বা সিঙ্গেল প্যারেন্ট- পরিবার ও সমাজ কারো জন্যই সুখের নয়। তারপরও, সমস্যা যত কঠিনই হোক না কেন- পরিস্থিতি মানুষকে তা সমাধানের পথ খুঁজতে বাধ্য করে। অল্প বয়সে দুর্ঘটনায় বিবাহবিচ্ছেদ বা বিধবা হওয়ার পর অনেক নারীকে পুনরায় বিয়ে না করে একক মায়ের জীবন বেছে নিতে হয়। যদিও একক মা বা একক মা যারা বাবার অজান্তেই সন্তান লালন-পালন করছেন তাদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও তাও খুব কম নয়। ফলে জানা-অজানা অনেক পরিবারে শিশুরা মায়ের ছায়ায় বেড়ে উঠছে।

.

সমাজের পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টি এবং আর্থিক কষ্ট সহ্য করেও, একক মা কখনোই তাদের সন্তানদের ছেড়ে যায় না, তারা তাদের পাশে থাকে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে নিয়ে যায়। অনেক নারী তাদের সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের সন্তানদের সম্মান করতে এবং তাদের সুখে সুখী হতে লড়াই করছেন। এই যুদ্ধে তারা সফলও হচ্ছে। যার মূলে রয়েছে- আজকের সমাজে নারীরা আর শিক্ষায় পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নেই। উচ্চ শিক্ষিত নারীরা একক মা হওয়া সত্ত্বেও তারা কর্মক্ষম এবং স্বাবলম্বী। অনেকে সামাজিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত। তাই তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে সমাজে কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে বসবাস করতে পারছে। সন্তানদের পড়াতে ও উচ্চশিক্ষা দিতে তাদের কারো সহানুভূতির প্রয়োজন নেই।

.

সমাজের সচেতন মহলের প্রশ্ন- এমন দিন কবে আসবে যেদিন সমাজ কোনো একক নারীকে তার জীবনযাপনের জন্য প্রশ্ন করবে না? এটা কি তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে না?

.

একক মা কর্মরত থাকলে তাদের কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি তাদের সন্তানদের পাশাপাশি পরিবারের প্রতিও মনোযোগ দিতে হবে। এরপরও সমাজের নানা সমালোচনা শুনতে হয় তাদের। এর কারণ কুসংস্কার এবং নেতিবাচক মনোভাব। তাই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। একাকী চলাফেরা করা সংগ্রামী নারী ও মায়েদের অবশ্যই বন্ধুর মতো তাদের পাশে থাকতে হবে, সমাজের সকল নারী-পুরুষ তাদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ নিশ্চিত না করলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

12 Responses

  1. আসলেই সিঙ্গেল মা দের অনেক কিছু সহ্য করতে হয়।

  2. কই ইসলামে তো নারীদের বিশেষ করে মায়েদের অনেক সম্মান দিয়েছে।

  3. ইসলামের পথে আসুন, কোন সমস্যা হবেনা ইনশাল্লাহ

  4. আপনার লেখা মন ছুঁয়ে গেলো।

  5. সিঙ্গেল মাদাররা কিন্তু অনেক কিউট হয় দেখতে।

  6. তুমি কি সিঙ্গেল মাদার নাকি? তোমাকে পোয়াতি কে করেছিলো সত্যি করে বল।

  7. সমাজের একদম সত্য দিক তুলে ধরেছেন।

  8. ধন্যবাদ সুন্দর লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।

  9. বিয়ে করে ফেলে না কেন এই মহিলা গুলো তাইলেই তো আর সিঙ্গেল থাকবে না।

  10. আমি বিয়ে করতে রাজি আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *